আই এন ও এর লক্ষ্য কি?

ভারত-ভিত্তিক নিউট্রিনো মানমন্দির (আই এন ও) একটি বৃহৎ বিজ্ঞান প্রকল্প যার উদ্দেশ্য নিউট্রিনো কণা সম্বন্ধে গবেষণা| নিউট্রিনো একটি মৌলিক কণা যা প্রাকৃতিকভাবে সূর্য্য, বিভিন্ন নক্ষত্র ও পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে উৎপাদিত হয়| প্রাথমিকভাবে এই কণাকে ভরশূন্য মনে করা হলেও সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন পরীক্ষায় নিউট্রিনোর দোলন ধর্মের আবিষ্কার অন্যরকম ইঙ্গিত দেয়|

নিউট্রিনোর ভরের অস্তিত্ব প্রমাণ কণা পদার্থবিদ্যা (পার্টিকেল ফিজিক্স) ছাড়াও অণু পদার্থবিদ্যা ( নিউক্লিয়ার ফিজিক্স), ভূপদার্থবিদ্যা (জিওফিজিক্স), জ্যোতিপদার্থবিদ্যা (আস্ট্রফিজিক্স) এবং সৃষ্টিতত্ব (কসমলজি) ইত্যাদি ক্ষেত্রের গবেষণাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে| নিউট্রিনোর ভর ও দোলন ধর্মের আবিষ্কার নিউট্রিনো গবেষণায় একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র| এই বিষয়ে অনেক প্রশ্নই এখনো অমীমাংসিত যার জন্য বহু সময়ব্যাপী অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন| নিউট্রিনোর ভরের সঠিক পরিমাপ আমাদের অজানা এবং নিউট্রিনো নিজেই তার বিপরীত কণা কিনা সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিত নই| নিউট্রিনো পদার্থবিদ্যার গবেষণা ক্ষেত্রে এইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পাবার জন্য আজ তাই সম্পূর্ণ নির্ভুল ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন| এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতবর্ষের বিজ্ঞানীমহলে কয়েক বছর আগে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল যার পরিণাম ভারত-ভিত্তিক নিউট্রিনো মানমন্দির (আই এন ও)|

নিউট্রিনো পদার্থবিদ্যায় পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য একটি বিশ্বমানের গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলাই আই এন ও এর উদ্দ্যেশ্য| নিউট্রিনো কণা সনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন ও তাই নিউট্রিনো কণা সনাক্তকারী যন্ত্রকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অন্যান্য কণা থেকে রক্ষা করা জরুরি| এই গবেষণাকেন্দ্রটি দক্ষিণ ভারতে মাদুরাই এর নিকটবর্তী থেনি জেলার একটি পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হবে| সর্বদিকে ১ কিমি. গভীর পাথরের দেয়াল কণা সনাক্তকারী যন্ত্রটিকে নিউট্রিনো ব্যতীত অন্যান্য কণা থেকে রক্ষা করবে| এই পাহাড়ে দুটি গুহা তৈরি করা হবে ও একটি ২ কিমি লম্বা সুরঙ্গ মূল প্রবেশপথের সাথে গুহা দুটিকে যুক্ত করবে| একটি গুহায় থাকবে আইক্যাল যন্ত্র ও অন্যটিতে থাকবে কম্পুটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিন নিয়ন্ত্রণ ওপর্যবেক্ষণ যন্ত্র|

আই এন ও প্রকল্পে আইক্যাল ব্যতীত নিউট্রিনো বিষয়ক অন্যান্য পরীক্ষারও পরিকল্পনা রয়েছে| তার একটি নিউট্রিনো-শুন্য যুগ্ম বিটা ক্ষয় (নিউট্রিনো-লেস ডবল বিটা ডিকে অথবা এন ডি বি ডি) সনাক্ত করার পরীক্ষা| এই ধরনের পরীক্ষার ফলাফল নিউট্রিনো কণার প্রকৃত চরিত্র, অর্থাৎ তা ডিরাক না মায়রানা কণা, এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করবে| এই পরীক্ষাটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ রূপে ব্যবহৃত গুহায় স্থাপিত হবে|

প্রচার ও সচেতনতা

আই এন ও দল তার সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান সচেতনতা সভা ও প্রচার কর্মসূচি সংগঠিত করে থাকে| স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের টাটা ইন্সটিট্যুট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের গবেষণাগারে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং পরীক্ষামূলক উচ্চ শক্তি পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়| নির্মানস্থলের নিকটে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা গড়ে তুলতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে বিভিন্ন কার্য্যক্রম সংগঠিত করা হয়|